পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া কর্তৃক গবেষণাধীন ‘কৃষি জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে সমবায় ভিত্তিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা’ এর ধান কর্তণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে শেরপুর উপজেলার চকপাথালিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব স্বপন ভট্টাচার্য, এমপি এবং জনাব মোঃ হাবিবর রহমান, এমপি, বগুড়া-৫। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব জনাব মোঃ রেজাউল আহসান । পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’র মহাপরিচালক জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) ধান কর্তণের অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয় করেন।
উল্লেখ্য ৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া কর্তৃক প্রতিবারের মতো আয়োজিত আন্তর্জাতিক কৃষি প্রযুক্তি মেলা ‘৯ম এগ্রো-টেক বাংলাদেশ- ২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশে এখন অনেক আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আছে যেগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে তেমনি দারিদ্র বিমোচন সম্ভব হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম বড় একটি প্রতিবন্ধক হলো জমি খন্ড খন্ড এবং জমির আইল। তিনি পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়াকে কিভাবে জমির আইল তুলে দিয়ে কৃষি জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমন্নিত চাষাবাদ শুরু করা যায় সে বিষয়ে একটি গবেষণা করতে বলেন।
পরবর্তীতে, আরডিএ, বগুড়ার মহাপরিচালক জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) দ্রুত একটি উন্নয়ন কর্ম-পরিকল্পনা হাতে নেন এবং ‘কৃষি জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে সমবায় ভিত্তিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। এই গবেষণা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল কৃষি জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে প্রায় ৫.০% অব্যবহৃত উর্বর জমিকে কৃষি খাতের আওতায় নিয়ে আসা; সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদন খাতে (যেমন- শ্রম, সেচ, বীজ, সার, কীটনাশক) ব্যয় কমিয়ে আনা; সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে অবশিষ্ট জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ পূর্বক অকৃষি খাতে নুতন কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি করা; বিভিন্ন ধরণের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি (যেমন- দ্বি-স্তর বিশিষ্ট কৃষি, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ) হস্তান্তরের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা; এবং জিআইএস ভিত্তিক মানচিত্র প্রস্তুতকরণের মাধ্যমে আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
এরই ধারাবাহিকতায় গ্রামবাসীদের নিয়ে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের উদ্বুদ্ধকরন ও স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ কাজ শুরু করা হয়। গবেষণা প্রকল্পটির পাইলটিং এলাকায় মোট ৭২ টি প্লট ছিল। এই ৭২ টি প্লটের মোট আয়তন ৭৫৮ শতক। এর বাইরে ২২৪.৫ শতাংশ জমি রয়েছে যেখানে শুধু সজ্বি চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন মাত্র ২.৫ শতকের কয়েকটি প্লট ও সর্বোচ্চ একটি ৬৬ শতক আয়তনের প্লট আছে। পরবর্তীতে, সেচের পানি ধরে রাখার সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ৭৮ টি কৃষি জমির আইল তুলে দিয়ে ২৪ টি বড় কৃষি প্লট তৈরী করা হয়েছে। এই ৭৮ টি কৃষি জমির মালিক হলেন মোট ৪৪ জন গ্রামবাসী যারা চকপাথালিয়া ও পাশ্ববর্তী ফুলবাড়ি গ্রামে বসবাস করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে, কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে এবং তাদের সরেজমিনে ফলাফল দেখানোর জন্য আরডিএ নিজস্ব অর্থায়ানে তাদের ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে দেয়া, ধানের চারা সরবরাহ, মেশিন দিয়ে ধানের চারা লাগানো, মেশিন দিয়ে আগাছা নিড়ানো এবং মেশিন দিয়ে ধান কাটা-মাড়াই ও ঝাড়াই এর কাজে সহযোগিতা করছে। এতে কৃষি শ্রমিকের খরচ হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে, প্রতিটি কাজে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে। ফলে, কৃষক তাঁদের ফসল ফলিয়ে লাভবান হবেন।
একসাথে একটি এলাকায় এই সময়ে একই জাতের ধান চাষ, সার-কীটনাশক প্রয়োগের ফলে আশা করা যায় ধানের ফলন ভালো হবে। এর ফলে, ধানের ক্রেতা বা চাতাল মালিকগণ সরাসরি এই এলাকায় এসে একবারে কৃষকদের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ধান কিনে নিয়ে যেতে পারবে। এভাবে, একটি সমবায় ব্যবস্থাপনাভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। যার মাধ্যমে উক্ত এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন। এই কৃষি পরিচালনা পদ্ধতি সফলতা লাভ করলে তা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকাতেও জনপ্রিয়তা পাবে।