গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি এবং প্রতিমন্ত্রী জনাব স্বপন ভট্টাচার্য, এমপি ০৬ জুলাই, ২০১৯ইং তারিখে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়া পরিদর্শন করেন। এসময়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব জনাব মোঃ কামাল উদ্দিন তালুকদার সফর সঙ্গী হিসেবে তাদের সাথে ছিলেন। মাননীয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মহোদয় রংপুর হতে দুপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’য় আসেন। প্রথমেই মাননীয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’র মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং আরডিএ’র অনুষদ সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অতিথিবৃন্দ আরডিএ’র প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন ইউনিটসমূহ পরিদর্শন করেন এবং আইটি সেন্টারের সামনে বৃক্ষরোপন করেন। এরপর আরডিএ, বগুড়া’র আইটি সেন্টারে “আমার গ্রাম আমার শহর” বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমীর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত ১৭টি সেক্টর যথাক্রমে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্রামীণ নিরাপদ পানি ব্যবস্থা, গ্রামীন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, গ্রামীণ তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্রামীণ বাসস্থান, সেনিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা, গ্রামীণ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা, গ্রামীণ জনগোষ্ঠির আর্থিক সেবা খাতে অন্তর্ভূক্তি, গ্রামীণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক পরিষেবা, গ্রামীণ উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, গ্রামীণ বাজার ব্যবস্থা, গ্রামীণ নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থা, গ্রামীণ সামাজিক নিরাপত্তা, গ্রামীণ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, গ্রামীণ শিশু ও নারী উন্নয়ন, গ্রামীণ মানব সম্পদ উন্নয়ন, গ্রামীণ যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন বিষয়ে পর্যালোচনার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি বলেন, “কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কৃষি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কৃষি ও ভাগ্যাহত কৃষককূলের উন্নয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচী। দেশের সংকটকালীন মূহুর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি উন্নয়নে যে রূপরেখা প্রদান করেছিলেন পরবর্তীতে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমার গ্রাম আমার শহর-এর যে স্বপ্ন দেখছেন সেই স্বপ্নের গ্রাম বিনির্মানে এবং সরকারের ২০২১ ও ২০৪১ এর রূপকল্পে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করার যে প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন সেখানে গ্রামগুলোতে নগর সুবিধার প্রসার বাড়ানো সম্ভব হলে বদলে যেতে পারে গ্রামীণ জনগণের জীবনচিত্র, দূর হতে পারে দারিদ্র, জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পৌঁছে যেতে পারে কাংখিত মধ্যম আয়ের দেশে। যেহেতু কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি সেহেতু কৃষি জমির অপচয় রোধে জমির আইল অপসারণ করে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল চাষ করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং গামীণ জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ জনগণকে কৃষি জমি সংক্রান্ত গতানুগতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য তাদের কৃষি জমি এককীকরণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং সমবায় সমিতি গড়ে তোলার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গ্রামীণ জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে, গ্রামে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এভাবেই বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার “আমার গ্রাম-আমার শহর” বিনির্মাণ সহজ হবে।” একই সাথে তিনি আরডিএ, বগুড়া’র “আমার গ্রাম আমার শহর” বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রসংসা করেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব স্বপন ভট্টাচার্য, এমপি মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের হাওর এলাকার কৃষকদের জমি পানির নিচে থাকার পরেও তারা সমবায় সমিতির মাধ্যমে একত্রিত হয়ে চাষাবাদ করে অনেক উন্নতি করেছে। একই ভাবে কৃষি জমি একত্রীকরণ করে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগন কাংখিত উন্নয়ন করতে পারবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব জনাব মোঃ কামাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, আরডিএ, বগুড়া’র অনুষদ সদস্যবৃন্দ গবেষণার মাধ্যমে গবেষণা গ্রাম, শেরপুর উপজেলার চকপাথালিয়ার জনসাধারণের প্রত্যাশার যে চিত্র গবেষণার মাধ্যমে তুলে এনেছেন তা “আমার গ্রাম-আমার শহর” বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও তিনি আরডিএ, বগুড়া কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক যে উন্নয়ন ঘটছে তারও প্রংশসা করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী জনাব মোঃ সাইফুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী জনাব মোঃ খলিলুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ হাবিবর রহমান, এমপি, বগুড়া-৫ ও জনাব রেজাউল করিম বাবলু, এমপি, বগুড়া-৭। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ আরডিএ, বগুড়া’র কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের প্রথম দিনে মাননীয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মহোদয় রংপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), রংপুর স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে অক্টোবর- ২০১৪ হতে সেপ্টেম্বর- ২০১৮ মেয়াদী প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের (গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট) গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত করে তাদের দারিদ্র বিমোচন করার নিমিত্তে আরডিএ, বগুড়া’র অধীনে রংপুরের তারাগঞ্জ জেলায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’র আদলে একটি স্বতন্ত্র একাডেমী স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এরপর মাননীয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মহোদয় রংপুরে স্থাপিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট “পল্লী জনপদ” প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এ প্রকল্পটি দেশের ০৭টি বিভাগে প্রতিটিতে একটি করে মোট ০৭টি এলাকায় (রংপুর, গোপালগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল) বাস্তবায়িত হচ্ছে। কৃষি জমি অপচয় রোধ, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উন্নত আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পল্লী এলাকায় আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা স¤প্রসারণ করে আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন, পল্লীবাসী একত্রে বসবাসের গ্রোথ সেন্টার পর্যায়ে স্বল্প ব্যয়ে চার তলা বিশিষ্ট ৭টি পল্লী হাউজিং (২৭২ টি পরিবারের জন্য) নির্মাণ, দুইতলা বিশিষ্ট ৭টি ক্যাটেল, পোল্ট্রী সেড নির্মাণ এবং এসকল স্থানের বর্জ্য বায়োগ্যাস প্লান্টে ইনপুট হিসাবে ব্যবহার এবং ফ্ল্যাটে বসবাসকারীদের স্ব-উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তির উৎস হিসেবে কমিউনিটি ভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, সৌর শক্তির নির্ভর পানি সরবরাহ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, বর্জ্যমুক্ত বহুতল আবাসন সুবিধা স¤প্রসারণ ও মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নে জৈবসার উৎপাদন, আরডিএ ঋণ কার্যক্রমের আওতায় কৃষি এবং অকৃষি খাতে উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণসহ অতিরিক্ত কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন করা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, মহান ১০ম জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরডিএ, বগুড়া’র মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট পল্লী জনপদ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। যা এদেশের পল্লী এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ উল্লেখ যে, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার-২০১৮-এ ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’এর ধারনাও বর্ণিত প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মর্মে প্রতীয়মান হয়।
তারিখঃ ০৬/০৭/২০১৯
পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া।