বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এপ্রিল ২০১৫ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদী একটি চলমান প্রকল্প। জবলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুকি মোকাবেলায় ধান, দানা জাতীয় শষ্য এবং বিভিন্ন সব্জি উৎপাদনে সেচের পানি, উৎপাদন উপকরণ ও জ্বালনী সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব রেইজড বেড, এসআরআই, এডবিস্নউডি এবং ট্রাইকো কম্পোস্ট প্রযুক্তির বহুল প্রচলন, জনপ্রিয়করণ ও মাঠ পর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণের নিমিত্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ।
বছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের জন্য সেচ অপরিহার্য। মোট ব্যবহৃত পানির ৯৭ ভাগ সেচ কার্যে ব্যবহার হয়। ভূগর্ভস্থ পানির তুলনায় উপরিভাগের পানি সেচের জন্য অধিক উপযোগী হলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপতা/পর্যাপ্ততা না থাকায় দেশের ৭৮ ভাগ সেচ ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। তাই সেচ কার্য পরিচালনায় প্রতিবছর গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। উলেস্নখ্য, প্রচলিত সেচ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩-৪ হাজার লিঃ সেচ পানি প্রয়োজন। অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানিসত্মরের ক্রমাগত নিমণগামিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলশ্রম্নতিতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি বেড়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের সংমিশ্রন, মাটির জৈব উপাদান ও পুষ্ঠিমান কমে যাচ্ছে এবং মাটি হারাচ্ছে তার গুণগতমান। এসকল সমস্যাসমুহ মোকাবেলায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো, মাটির গুণগত মান রক্ষা, ফসলের উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন ব্যয় কমাতে জধরংবফ ইবফ প্রযুক্তি উপর সিআইডবিস্নউএম, আরডিএ-কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র যৌথ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে বেড পদ্ধতিতে ফসল চাষে ৪২ ভাগ সেচ পানি সাশ্রয় হয়। ধানের ফলন ২০ ভাগ পর্যমত্ম বৃদ্ধিসহ ১৮-২০ ভাগ ইউরিয়া সার কম লাগে। একবার বেড তৈরী করা হলে স্থায়ী বেডে বিনা চাষে পরবর্তী অনেকদিন ধরে ফসল ফলানো যায়। AWD প্রযুক্তি নিয়ে আরডিএ-ব্রি, এডিবি’র অর্থায়নে IRRI এর সাথে যৌথভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা পরিচালনার ফলাফলে দেখা গেছে ধান চাষে ১০-৩০ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এছাড়াও আরডিএ-কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) Improvement of rice based cropping systems বিষয়ক যৌথ গবেষণা দেখা যায় ঝজও প্রযুক্তির মাধ্যমে সেচ পানি, বীজ সাশ্রয়সহ বোরো ও আমন মৌসুমে ধানের ফলন ২০ ভাগ এর অধিক বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এ সকল গবেষণার ধারাবাহিকতা রক্ষা AWD, RB ও SRI প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার, প্রচলন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ভূগর্ভস্থ পানির নিমণগামিতা রোধ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং সর্বোপরি দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালনে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদী ‘‘পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’’ শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্পটি বাসত্মবায়িত হচ্ছে।
আদর্শ মাটিতে সাধারণতঃ পানির পরিমাণ ২৫ ভাগ, যা মৃত্তিকা কণার ফাকা অংশে (pore space) অবস্থান করে। মাটিতে সেচ প্রদান করলে এই ফাকা অংশ পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। সম্পূর্ণ ফাকা অংশ পানি দ্বারা পূর্ণ হলে মাটির এ অবস্থাকে পরিতৃপ্ততা (saturation limit) বলে। এর পরেও পানি প্রদান অব্যাহত রাখলে মাটির উপরে স্থির পানি (standing water) পরিলক্ষীত হয়। এই পানি সাধারণতঃ অভিকর্ষিয় বলের কারণে মৃত্তিকা সত্মরে অনুপ্রবেশ (percolation) ও গভীর অনুপ্রবেশ (deep percolation) প্রক্রিয়ায় gravitational water হিসেবে পরিশ্রম্নত হয়। অবশিষ্ট পানি যা অভিকর্ষীয় বলের বিপরিতে মৃত্তিকা কণার ফাকা অংশে ধরে রাখে মাটির এই অবস্থাকে Field Capacity বলে। এই পানি বাষ্পীয়ভবন এবং ফসল গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে নিঃশ্বেষিত হয়ে এমন পর্যায়ে আসে যখন মাটিতে সামান্য পরিমাণ পানি থাকলেও তা মাটি এমনিই শক্তভাবে ধরে রাখে যে ফসল তার প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করতে পারে না এই অবস্থাকে নেতানো অবস্থা বা wilding point বলে। মাটির এই নেতানো অবস্থা এবং Field Capacity’র মধ্যবর্তী পানির পরিমাণকে প্রাপ্তিসাধ্য পানি (available water) বলে যা ফসলের বর্ধন/শরিরবৃত্তীয় কাজের জন্য উপযোগী। মাটির এই পরিমাণ পানির ঘাটতি মেটানোর জন্যই আমরা সেচ প্রদান করে থাকি। এই পরিমাণ পানির অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করলে তা অপচয় হিসেবে গণ্য হয়। তাছাড়া মাটিতে স্থির পানির গভীরতা যতই বাড়ানো হবে ততই অনুপ্রবেশ প্রক্রিয়া (deep percolation) তরান্বিত হবে। এ সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে সেচ পানির অপচয় রোধে অডউ এবং জধরংবফ ইবফ পদ্ধতিতে সেচ প্রদানের পদ্ধতি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। কৃষদের বিষয়টি হাতে কলমে প্রদর্শণের জন্য কাটথ্রট-ফুম ব্যবহার করে সেচ পানির পরিমাপের কৌশল শেখানো হচ্ছে। নিমেণ মাটির আর্দ্রতা ও সেচ পানির গতিবিধি (Soil Moisture Movement) চিত্রে মাধ্যমে প্রদর্শিত হলোঃ
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য
আধুনিক পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করাই প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যাবলী নিম্নরূপ
প্রকল্প এলাকাঃ
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
সেচ প্রকৌশলগত দিক
কৃষি তাত্ত্বিক দিক
প্রাতিষ্ঠানিক দিক
প্রারম্ভিক পরিকল্পনা ওয়ার্কসপ (তারিখ: ১০ ডিসেম্পবর ২০১৫)
আইটি ভবন, আরডিএ
প্রশিক্ষণ
প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/এনজিও প্রতিনিধি, সুফলভোগী কৃষকগণ পানি সাশ্রয়ী এডব্লিউডি, রেইজড বেড, এসআরআই এবং ট্রাইকো কম্পোস্ট প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের কলাকৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে ৮০০ জনকে মডেল সম্পর্কে অবহিতকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ; ৮০০০ জন কৃষককে ফার্মার্স ফিল্ড স্কুল এবং ৩২০ জনকে মেশিনারী অপারেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও প্রযুক্তিসমূহ বহুল জনপ্রিয়করণ ও প্রসারের জন্য ৫৬০ টি মাঠ দিবস আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রকল্পের সুবিধাভোগিদের মাঝে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করছেন জনাব এ. এন. শামছুদ্দিন আজাদ চৌধুরী, সদস্য, কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন